• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

যমুনা নদীতে বিশাল চর পড়ায় হুমকিতে আরিচা বন্দর ও হাট বাজার

  • ''
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০২৪

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:

শিবালয়ের আরিচা লঞ্চ ও ফেরি ঘাট, হাট-বাজার ও বন্দর বাজার সংলগ্ন যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশাল চর পড়ার কারণে নদীর পানি তীরবর্তী এলাকা হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে সরে গেছে। বছরজুড়ে কোটি-কোটি টাকার ড্রেজিং করেও নাব্যতা সংকট কাটছে না। বরং চরম আকার ধারণ করছে নাব্যতা সংকট। ফলে, আরিচা ঘাট ও বন্দর বাজার এবং গরু-ছালের হাটে নৌপথে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে আরিচা ঘাট কেন্দ্রিক ব্যাবসা-বাণিজ্যেও। ক্রেতা-বিক্রেতা কমে যাওয়ায় ক্রয়-বিক্রয়ও কমে গেছে। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট, হাট ও বন্দর বাজার।

জানা গেছে, ১৯৬৩ সালের ৩১ মার্চ একটি মাত্র ফেরি দিয়ে আরিচা ঘাটের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই এ ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরিচা বন্দর বাজার, মাছের আড়ত, ৭টি স-মিল এবং পরবর্তীতে আরিচা গরু-ছাগলের হাটসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসবের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই এলাকার মানুষের রুটি-রুজি। কিন্তু ড্রেজিং অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ঘাট এলাকায় বিশাল চর পরায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় চিন্তিত রয়েছেন স্থানীয়রা ব্যবসায়ীরা।

বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ইউনিট শুষ্ক মৌসুম শুরু হবার আগে থেকেই আরিচা ঘাটের কাছে যনুমা নদীতে ৭/৮টি ড্রেজার দিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং করে কোন রকমে চালু রেখেছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট সার্ভিস। এছাড়া, আর কোন কাজে আসেনি ব্যায় বহুল এ ড্রেজিং। উল্টো ড্রেজিংকৃত মাটি নদীতে ফেলার কারণে বন্দর বাজার সংলগ্ন চরের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার পথ চরের মধ্য দিয়ে পায়ে হেটে হাটে এবং ঘাটে পোঁছাতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। ফলে মাছের আড়তে, গরু-ছাগলের হাটে এবং প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে সকাল বেলার বাজারে সবজি নিয়ে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তির ফলে অনেকেই এখন অন্যত্র বাজার ঘাটে চলে যাচ্ছে। এতে আরিচা বাজারের সবজির আমদানি কমে গেছে এবং দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমতাবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন আরিচা বন্দর হাট-বাজার কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা।

গরু ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মো. কুদ্দুস ও মো. রশিদ শেখ, ইছাক ব্যাপারীরা বলেন, চর পড়ে নদী অনেক দুরে সরে যাওয়াতে গরু নিয়ে হাটে আসা অনেক কষ্টকর। প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে নৌকা থেকে গরু-ছাগল নামিয়ে চরের উপর দিয়ে পায়ে হেটে হাটে পোঁছাতে হচ্ছে। শুধু চরের কারণে ব্যাবসায়ীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এসব বিষয়ে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্র ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দুই দিন গরু-ছাগলের হাট বসে আরিচা ঘাটে। প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন হাজার গরু-ছাগল উঠে। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের হাট-বাজারসহ নদীর ওপারে মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে গরু নিয়ে আরিচা হাটে আসেন ব্যবসায়ীরা। চরের কারণে এসব গরু-ছাগল প্রায় ২কিলোমিটার দুরে নৌকা থেকে নামিয়ে পায়ে হেটে আরিচা হাটে যেতে হচ্ছে। এছাড়া, আরিচা হাট-বাজার থেকে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। এবারও ৬ কোটি টাকা ডাকে এ গরু-ছাগলের হাট থেকে ভ্যাট-আইটিসহ সরকারের প্রায় ৭কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। তাই ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাটের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং গরু-ছাগলের হাট টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন তিনি।

আরিচা মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, চরের কারণে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে নৌকা রেখে আড়তে যাতায়াত করতে হচ্ছে জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদেরকে। রাত জেগে মাছ ধরে ভোরে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে চর পাড়ি দিয়ে আড়ত করা অনেক কষ্টের ব্যাপার। তাই অনেকেই এখন মাছ নিয়ে আর আরিচা আড়তে না এসে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করছে। এতে আরিচা মাছের আড়তে মাছের আমদানি আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে।

কাঠ ব্যবসায়ী ও শিবালয় বন্দর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আরিচা বন্দর বাজারে ৭টি স-মিলের ৪০/৫০টি পরিবারের রুটি-রুজির একমাত্র কাজ কাঠ ব্যাবসা। এছাড়াও বাজারের চার/পাঁচশো’ দোকানদার দেও পরিবার এই বাজারের বেচা-কেনার উপর নির্ভরশীল। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল বাচামারা, বাঘুটিয়া, ত্রিশুন্ডি, মধ্যনগর, আশ্রয়ণ হাট, পারুলিয়া, আলোকদিয়া, চরকাটারি, দত্তকান্দি ও সিরাজগঞ্জের চৌহালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসতেন কাঠসহ অন্যান্য সামগ্রী নেওয়ার জন্য। এছাড়া পাবনার বেড়া-নাকালিয়া থেকে চাল বোঝাই নৌকা আসতো আরিচা ঘাটে। আরিচা ঘাটের কাছে চর পড়ার কারণে ওইসব এলাকা থেকে এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতারা আসছেন না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই মন্দা। এই পরিস্থিতিতে এখন টিকে থাকাই অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads